খেলাধুলার জগতে পিরোজপুরের রয়েছে এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, এ্যাথলেটিকসসহ অন্যান্য ক্রীড়ানুষ্ঠানের সুতিকাগার হল ঐতিহ্যবাহী পিরোজপুর সরকারি স্কুল মাঠ। বিশ শতকের চল্লিশ এর দশক থেকে পুরো সত্তর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত মাঠটি বিভিন্ন খেলাধুলায় মুখরিত হয়ে উঠত।
৪০ এর দশকে পিরোজপুরের ফুটবল অঙ্গনে টাউন ক্লাব ও রাইজিং সান নামে দুইটি শক্তিশালী দল ছিল। পরবর্তীতে রাইজিং সান এর বদলে নর্দার্ন ক্লাব, টাউন ক্লাবের কিছু তরুণ সদস্য সমন্বয়ে ইউনাইটেড ক্লাব এবং কিছু তরুনের সমন্বয়ে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব গঠিত হয়। ষাটের দশকে পূবালী ও আজাদ ক্লাব নামে দুইটি ক্লাব ছিল। উপরোক্ত ক্লাবগুলি স্থানীয় লীগ খেলায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করত। চল্লিশের দশকে পিরোজপুরের মাঠে দুইজন খেলোয়ারের ক্রীড়ানৈপূণ্যে দর্শককূল মুগ্ধ হত এবং আজও প্রবীণদের মুখে নাম দুটি শোনা যায়- এরা হলেন ভূপাল ও কেশব।
পিরোজপুর সদর উপজেলার খামকাটা গ্রামের আব্দুল মান্নান ক্রীড়া জগতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। ১৯৫৩ সালে পিরোজপুর সরকারি হাইস্কুলের অধিনায়ক হিসাবে ঢাকায় ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণ করেন। মোট ৪টি টিম খেলায় অংশগ্রহণ করেন। চূড়ান্ত খেলায় পাকিস্তানের জালালাবাদকে পরাজিত করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ান হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। আব্দুল মান্নানের অধিনায়কত্বে মুগ্ধ হয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ভোজসভার আয়োজন করেন।
৫০ এর দশকে পিরোজপুরের মাঠে যাদের ফুটবল খেলা দর্শক প্রানভরে উপভোগ করত তাদের মধ্যে প্রথম সারিতে ছিলেন মোহাম্মদ মিনা, বেলায়েত, খালেক তালুকদার, মান্নান তালুকদার, আনোয়ার, ইয়াকুব, মোতাহার, মোদাচ্ছের, চুন্নু মোল্লা, আজিজ, ইয়াকুব, জলিল, লতিফ, আবুয়াল, রুস্তম খাঁ, সোবাহান খাঁ, সানাউল্লাহ, সুরেশ, শংকর সিংহ, ম্যানডিস, ননী প্রমুখ। ১৯৫৩ সালে পিরোজপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় জাতীয় আন্তঃস্কুল প্রতিযোগীতায় চ্যাম্পিয়ান হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
৭০ এর দশকে যারা ভাল ফুটবল খেলোয়ার হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল তাদের মধ্যে মধু, তোতা, বাহাদুর, মিরাজ, সিধাম, মালেক,সুশীল, লাবু, নান্না-১, নান্না-২, কবির, সমীর, ইদ্রিস, অমল, মীর্জা, দুলাল প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। ৮০ এর দশক আশীষ, লিটন, মেরাজ-২ প্রমুখ ভাল খেলা উপহার দেন।
৬০ এর দশকে বিকেল হলেই পিরোজপুর টাউন হল মাঠ দর্শকে পরিপূর্ন হত ভলিবল খেলা দেখার জন্য। পিরোজপুরের ভলিবল অঙ্গন যাদের পদচারনায় একসময় মুখরিত ছিল তারা হলেন বেলায়েত, মোতাহার, সুরেশ মন্ডল, শংকর সিংহ, চুন্নু মিয়া, হাবিব, সমির, মিন্টু, সাবু, মান্নান, হামিদ, দিলীপ, সুশীল, অমল, শাহাদাৎ, আহসান প্রমুখ। এরা বিভাগীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করে যথেষ্ঠ প্রশংসা কুড়িয়েছে।
এ্যাথলেট জগতে পিরোজপুরে বেশ কয়েকটি উজ্জল নক্ষত্র রয়েছে। এদের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে স্বর্ণপদক বিজয়ী আনসার সিকদার (সর্টফুট), পনু (সাইক্লিং), নিলুফা (সাইক্লিং), তানিয়া (উচ্চলাফ), লিটন (সাতার) এবং রৌপ্য পদক বিজয়ী শংকর সিং (দীর্ঘ লম্ফ), নজিবর রহমান (দীর্ঘ লম্ফ), বাদশা (দৌড়) প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।
টেবিল টেনিসে মান্নান, কবির, সাব্বির, ইকবাল, আলমগীর, বাবু, সাহজাহান, মুন্না, সোহেল, লিটন, রিয়াজ, তরুণ, নিলু, তাহমিনা (রৌপ্য পদক প্রাপ্ত)। হকিতে তুষার, সেন্টু, মালেক, বাবু, রাকিব, বাদল, রেজা, মিলন, মহারাজ, সুমন, মুসা, খাজা। দাবায় চুন্নু মিয়া, শহীদ ফজলুল হক, রকিবুল হক, দাস। ব্যাডমিন্টনে খসরু, মরহুম লুৎফুল আমিন, হামিদ, নান্না, বাদল, মহারাজ, রিয়াজুল, জুয়েল। বডি বিল্ডিং এ মাহমুদ, মিন্টু, লন টেনিসে নূর মোহাম্মদ মোক্তার, এ্যাডভোকেট আজিজ মল্লিক, এ্যাডভোকেট আতাউর রহমান, এ্যাডভোকেট মাহাবুবুল আলম নান্না, মোশারেফ হোসেন, শাহদাৎ আহসান, সাব্বির, প্রমুখ ভালো খেলা উপহার দেন।
বর্তমানে জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়ার এ্যামিলি এবং তার ভাই এমেকা, লিটন প্রমুখ পিরোজপুর সদর উপজেলার কলাখালীর সন্তান।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS